গত ৫ আগস্ট বার্সেলোনার সঙ্গে দীর্ঘ ২১ বছরের সম্পর্কের ইতি টানতে হয়েছে বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিকে। এরপরই বিশ্বজুড়ে চলতে থাকে নানা আলোচনা। কেন এমন হলো, কোথায় যাচ্ছেন মেসি। সব আলোচনার অবসান ঘটিয়ে বার্সেলোনা অধ্যায় শেষে পিএসজি অধ্যায় শুরু করলেন মেসি। ফ্রান্সের এ ক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যারিয়ার শুরু হয়ে গেছে তাঁর।
গত ৩০ আগষ্ট পিএসজি হয়ে ফরাসি লিগে অভিষেক ও হয়ে যায় মেসির। ইতিমধ্যে, ফরাসি ক্লাবটির হয়ে লীগ ওয়ান ও চ্যাম্পিয়নস লিগে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। সবমিলিয়ে নতুন ক্লাবের হয়ে ৭ ম্যাচে ৪ গোলও করে ফেলেছেন সর্বাধিক ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার।
বার্সেলোনার সঙ্গে দীর্ঘ দুই দশকের সম্পর্কের ইতি টেনে ফ্রান্সে নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরুতেই বেশ সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল মেসিকে। বর্তমানে তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। পিএসজির হয়ে মৌসুমের শুরুর দিকে গোলহীনতায় নিন্দুকের প্রচন্ড সমালোচনায় বিদ্ধ হলেও, সবশেষ কিছু ম্যাচে চেনা ফর্মে ফিরে তাদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন মেসি। কিন্তু, তবুও বার্সেলোনা ছেড়ে কি সত্যিই সুখে আছেন মেসি?
আর্জেন্টিনা মহাতারকা বলেছেন, তিনি এখন বেশ ভালোই আছেন। পিএসজিতে এখন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার।
“এখন আমি খুবই সুখে আছি। যখন থেকে আমি আমাদের নতুন বাসায় গিয়েছি এবং বাচ্চারা তাদের নিত্যদিনের রুটিন এবং স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে তখন থেকে আমি পুরোপুরি মানিয়ে নিয়েছি এখানকার পরিবেশের সাথে। অবশ্য আমাদের বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলার জন্য বেশ কয়েকবার আর্জেন্টিনায় যেতে হয়েছে। যার জন্য আমাদের এখানে কিছু ম্যাচ মিসও দিতে হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি এখানে।” পিএসজির মতো ড্রেসিংরুম পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন মেসি। বার্সেলোনায় দীর্ঘদিন কাটানোর পর নতুন জায়গায় যাওয়া কঠিন। কিন্তু, প্রথম দিকে অদ্ভুত লাগলেও পিএসজিতে অনেক স্প্যানিশ জানা মানুষ থাকায় বিষয়টি সহজ হয়ে যায় আর্জেন্টাইন তারকার।
“আমি খুবই ভাগ্যবান যে ভালো কিছু খেলোয়াড় এবং ভালো কিছু মানুষদের নিয়ে গড়া একটি ড্রেসিংরুম পেয়েছি। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার মানিয়ে নেয়ার সময়টা খুব দ্রুতই শেষ হয়েছে। এটা সত্যি যে প্রথমদিকে অদ্ভুত লাগতো। একদিকে, এক জায়গায় অনেকদিন কাটানোর পর নতুন কোথাও যাওয়াটা কঠিন।”
“অন্যদিকে, এখানকার অনেককেই আমি আগে থেকে জানতাম এবং এখানকার অনেকেই খুব ভালো স্প্যানিশও বলতে পারে। এখানে ভালো মানুষ আছে অনেক। আমাদের স্কোয়াডটি খুবই সংঘবদ্ধ। বাইরে থেকে আপনি খুব সহজেই এটা বুঝতে পারবেন আর আমি এখানে এসে আরো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।”
ফ্রান্সে ঘরোয়া ফুটবলে আধিপত্য বজায় রাখলেও পিএসজির অন্যতম টার্গেট এখন ইউরোপ সেরার মুকুট। তার জন্যই বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে উড়িয়ে আনে দলটি। ঘরের ছেলে বিশ্বকাপজয়ী কিলিয়ান এমবাপ্পেও আছে দলে। কিন্তু, তারপরও চ্যাম্পিয়নস লিগে সেরা হতে পারছে না দলটি। এক মৌসুম আগে ইউরোপ সেরা হওয়ার খুব কাছে গিয়েও বায়ার্নের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় ফরাসিদের।
কিন্তু, এবার লিওনেল মেসি যুক্ত হওয়ায় ফরাসি ক্লাবটিই উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের হট ফেভারিট। অনেকের মতে, এবার হয়তো মেসির ছোঁয়া বদলে যাবে পিএসজির ভাগ্যে। বিষয়টি মানছেন মেসিও। নিজেদের আসরে ফেভারিট ভাবলেও, দলের সমন্বয় নিয়ে কিছুটা চিন্তিত সাবেক বার্সেলোনা তারকা। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো বড় প্রতিযোগিতায় সেরা হতে দলগতভবে সবাইকে একত্রিত হতে হবে বলে মনে করেন মেসি।
“প্রায় সবাই বলে যে আমরা এবার বড় দাবীদার এবং এটি আমি অস্বীকার করবো না যে নামের ভারে আমরা এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের ক্ষেত্রে বড় দাবীদার। কিন্ত আমাদের এখনো অনেক কিছুর প্রয়োজন আছে- একটি শক্তিশালী দল হওয়ার ক্ষেত্রে। আমাদের দলগতভাবে সবাইকে একত্রিত হতে হবে এবং এর জন্য আমাদের অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী খেলোয়াড় রয়েছে যাদের জন্য কাজটি অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা বাড়তি সুবিধা পাবো। কিন্ত শুধু আমরাই না, আরো বেশ কিছু ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী আছে।”
আরও খেলার খবরঃ ‘অপ্রতিরোধ্য’ বায়ার্ন ছুটছেই
“চ্যাম্পিয়ন্স লীগ একটি কঠিন প্রতিযোগিতা, এজন্যই এই টুর্নামেন্টটি এতো সুন্দর এবং স্পেশাল। সব সেরা দলগুলো এখানে প্রতিযোগিতা করে এবং প্রতি বছরই এটি আরো কঠিন হচ্ছে। ফেভারিট আমরা অবশ্যই, কিন্ত শুধুমাত্র আমরাই ফেভারিট নই।” গ্রীষ্মকালীন দলবদলে মেসির সাথেই বার্সেলোনা ছেড়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছে তাঁর পরিবারও। প্যারিসে নতুন পরিবেশে কিভাবে পরিবারকে হ্যান্ডেল করছেন মেসি? তাঁরা কি ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখেছেন? আর্জেন্টাইন অধিনায়ক কথা বলেছেন নিজের পরিবার নিয়েও।
“আমরা যেমনটা ভেবেছিলাম তার থেকে অনেকটা সহজই হয়েছে ওদেরকে এখানে সেটেল করা। আমরা ওদের নিয়ে অনেক চিন্তা করেছিলাম যে এখানে মানিয়ে নেয়াটা ওদের জন্য কতটা কঠিন হবে। কিন্ত দেখা গেছে ওরাই সবথেকে তাড়াতাড়ি নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে এখানে।”
“ওরা ইতোমধ্যেই স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। তাই ওরা ফ্রেঞ্চ শিখে নেবে খুব তাড়াতাড়িই। কারণ বাচ্চারা যেকোনো কিছুই খুব তাড়াতাড়ি শিখতে পারে। এই সবকিছুই আন্তোনেলা আর আমাকে অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে। আমরা দেখলাম যে এই নতুন দেশ আর নতুন শহরে ওরাই সবচেয়ে দ্রুত নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।”