অ্যামাজন ডেলিভারি বয় থেকে বাংলাদেশকে হারিয়ে এখন স্কটিশ নায়ক

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম দিনেই দুর্ঘটনা। কিছুদিন আগেই ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে পর্যদুস্ত করার পর বিশ্বকাপের সুপার ১২-এ কোয়ালিফাই করার জন্য় যোগ্যতাপর্বের প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের কাছে ছয় রানে হেরে বসল বাংলাদেশ। ব্যাটে বলে ম্যাচের নায়ক ক্রিস গ্রেভস।

অ্যাসোসিয়েট দল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে আগাগোড়াই ফেভারিট ছিলেন বাংলাদেশ টাইগাররা। ম্যাচের স্ক্রিপটাও এগোচ্ছিল পরিকল্পনামাফিকই। তবে হঠাৎই সবটা লন্ডভন্ড করে দিলেন স্কটিশ অলরাউন্ডার গ্রেভস। ৫২ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা স্কটিশ দলকে অক্সিজেন প্রদান করেন তিনি। মূলত ২৮ বলে তাঁর করা ৪৫ রানের সুবাদেই ১৪০ রান করে স্কটল্যান্ড। এরপর বল হাতেও বাংলাদেশের সেরা দুই ক্রিকেটার শাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমের উইকেট তুলে নিয়ে দলকে ছয় রানে জিততে সাহায্য করেন তিনি। ম্যাচের সেরাও নির্বাচিত হন।

কিন্তু আদপে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া গ্রেভসের কিন্তু স্কটল্য়ান্ডের হয়ে খেলার কথাই ছিল না। অনুর্ধ্ব ১৯ বয়সকালে তিনি ইংল্যান্ডের নেট বোলার ছিলেন। তাঁর মা ইংলিশ হওয়ায় আরেক দক্ষিণ আফ্রিকাজাত ইংলিশ ক্রিকেটার ম্যাট প্রায়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর তিনি তাঁকে ইংল্যান্ডের হয়ে হয়ে নিজের খেলার ইচ্ছার কথা জানান। প্রায়ারও তাঁকে ট্রায়ালের সুযোগ করে দেন। কিন্তু চোটের কারণে চিকিৎসার জন্য তাঁকে স্কটল্যান্ডে আসতে হয়। এইভাবেই তাঁর স্কটিশ কেরিয়ার শুরু হয়।

২০১৭ সালে এমসিসি স্কটল্যান্ডের হয়ে তিনি লর্ডসের ময়দানে মাত্র ৫৫ বলে ১০৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নজরে আসেন। ৩১ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার কিন্তু মাত্র মাসখানেক আগেও স্কটল্যান্ড দলে ছিলেন না। তবে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে চার উইকেট নিয়ে দলে তাঁর জায়গা করে নেন। এরপর এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর স্কটিশ দলে অভিষেক ঘটে আর অভিষেকেই বাজিমাত।

প্রসঙ্গত, এক সময় তিনি অ্যামাজনের হয়ে ডেলিভারির বয়ের কাজও করতেন। সেইখান থেকে প্রথম সুযোগেই এহেন পারফরম্যান্স তাঁর দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রমের ও হার না মানা মনোভাবকে তুলে ধরে। স্কটিশ অধিনায়ক এবং আরেক দক্ষিণ আফ্রিকাজাত ক্রিকেটার কাইল কোয়েটজার গ্রেভসের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানান। তিনি বলেন, ‘এটা ওর জন্য় একটা দারুণ দিন হলেও আমরা কিন্তু অবাক হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্রেভসের জন্য গর্বিত। ও জীবনে অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যন্তও তো ও অ্যামাজনের হয়ে ডেলিভারি বয়ের কাজ করত। আর এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পারফরম্যান্স করছে।’ এই ঘটনা প্রমাণ করে দেয় প্রতিভা থাকলে শত বাধা পেরিয়েও অবশেষে সাফল্য পাওয়া সম্ভব।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *